রাজশাহী থিয়েটারের জন্মকথা
আমরা চলেছি সামনে
আমাদের জনগোষ্ঠীর মন মানসিকতায় যখন সামন্ত সংস্কৃতির অবশেষসমূহ শিকড় গেড়ে বসে আছে, যে মুহুর্তে সমাজের কর্ণধারেরা পুরানো বস্তাপচা প্রতিক্রিয়াশীল সাংস্কৃতিক মূলবোধ লালন করে চলেছে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জোয়ারে যখন দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে, ঠিক সে মুহুর্তে শোষণ নিপীড়নই যে শেষ কথা নয়, যুগ যুগান্তরের সঞ্চিত বিক্ষোভের ঘনীভূত পরিণতিতে নতুন দিন আসছে আসবেই- মানুষের মনের জমিতে নাটকের মাধ্যমে এ বিশ্বাসের শিকড় গাড়তে এবং দেশীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সবার মাঝে তুলে ধরার প্রয়াসে ২৭শে ডিসেম্বর ১৯৮৫ তে রাজশাহী থিয়েটারের আত্মপ্রকাশ।
নাটক একটি শক্তিশালী শিল্প মাধ্যম। রাজশাহী থিয়েটারের ব্যানারে স্বাধীনতার ছোয়া পাওয়া প্রাণোচ্ছল-সম্ভাবনাময় অনেক তরুণ মিলিত হয়েছে এদেশের নাটককে একটি আধুনিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দুর্দমনীয় আকাঙ্খায়। আমাদের লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ প্রেরণাকে এদেশের মানুষ অনুভব করবে নাটকের নতুন বিকাশে।
প্রমত্ত পদ্মার কুলে আমাদের বসবাস। সহস্র বছরের ইতিহাস ও ভৌগলিক পরিমণ্ডলে আমারা বেড়ে উঠেছি। শত শত বছর ধরে আমারা শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সুমহান আদর্শে আমরা উজ্জীবিত। বাংলাদেশে মঞ্চে আমরা আমাদের নিজেদের জীবন, পরিমণ্ডল ও লড়াই এর চিত্র তুলে ধরতে চাই। বাঙালি জাতির শেকড় সন্ধানের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বকীয় নাট্য আঙ্গিক বিনির্মাণে আমরা বদ্ধ পরিকর।
আমরা বাঙালি এটা আমাদের অহঙ্কার। আমরা বিশ্বাস করি, “বিশ্বমানবজাতি হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ,” আমাদের অবিরাম চলার পথ “এমন মানব সমাজ কবেগো সৃজন হবে, যেদিন হিন্দু মুসলমান বুদ্ধ খৃস্টান জাতি গোত্র নাহি রবে।”
যুগোপযোগী শিল্পসিদ্ধ নাট্যচর্চার ব্রত নিয়ে ১৯৮৫ সালে রাজশাহী থিয়েটার যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অন্যতম সদস্য সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ ও গণহত্যাকারী পাকিস্থানী শাসকদের আস্তিনে সাঁওতাল বিদ্রোহের এক মহাকাব্যিক নাম ইলামিত্র। ইলামিত্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী সংগঠন রাজশাহী থিয়েটার বাঙালির সহস্র বছরের প্রতিবাদী চেতনায় সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নাট্য প্রযোজনা মঞ্চে ও রাস্তায় সর্বদা সোচ্চার।