উপমহাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত ফিজিওথেরাপিস্ট এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আলতাফ হোসেন সরকার পাবনার অন্যতম কৃতীসন্তান ।
"বহুমাত্রিক প্রতিভার মেলবন্ধনে পাবনা"র অন্যতম উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক, উপমহাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত ফিজিওথেরাপিস্ট এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আলতাফ হোসেন সরকার ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আলহাজ আবু হোসেন সরকার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে একনাগাড়ে ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন । আবু হোসেনের বাড়ির খানকাঘর ছিল গরিব অসহায় ছাত্রদের আশ্রয়স্থল । মাতা নূরজাহান বেগম ছিলেন বিচক্ষণ গৃহিণী ।
প্রফেসর ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়, পাবনা থেকে ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন । এরপর বেজে ওঠে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের দামামা । তিনি একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন । দেশ স্বাধীন হলে প্রফেসর ডা. আলতাফ রাজশাহী কলেজ থেকে বেড়া কলেজে ট্র্যান্সফার হন এবং ১৯৭৩ সালে উক্ত কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ।
১৯৮২ সালে প্রফেসর ডা. আলতাফ হোসেন সরকার জিম্বাবুয়েতে চাকরি করার জন্য আফ্রিকা গমন করেন এবং চাকরির ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন । ১৯৯৯ সালে মাস্টার্স ইন ফিজিওথেরাপি এবং ২০০০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন । এছাড়া তিনি মেকানিক্যাল ডায়গনসিস ও থেরাপি (স্পাইন), বাওয়ান টেকনিক, অর্থোপেডিক মেডিসিন-সিরিয়াক্স, অ্যাডভান্স জেনারেল মেডিসিন ক্লিনিক্যাল নিউরো ডায়নামিক্স, ভিসারাল ম্যানুপুলেশন, মায়োফেসিয়াল রিলিজ, পজিশনাল রিলিজ-এ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ।
প্রফেসর আলতাফ হোসেন-এর ব্যাকপেইন চিকিৎসার ওপর লেখা অসংখ্য গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে । তাঁর লেখা বই পাঠক সমাজে ও চিকিৎসকদের মাঝে বেশ সমাদৃত হয়েছে ।
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরীক্ষক ও শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা-উপদেষ্টা । বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সেন্টার ফর ডিসেবল এবং ফিজিওথেরাপি রিভিউ (প্রথম ফিজিওথেরাপি পত্রিকা)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান । তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, বাংলাদেশ নর্থবেঙ্গল ওয়েলফেয়ার সমিতি, ঢাকাস্থ পাবনা সমিতি এবং লায়ন ফাউন্ডেশনের জীবনসদস্য । এছাড়াও তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন ।
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কোর্সে অংশগ্রহণ করেন । তিনি অসহায় অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্রি হেল্থ ক্যাম্প করেন । বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশ বেতারে সাক্ষাৎকার দেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং উপদেশ সম্বলিত বিভিন্ন রোগের ওপর তাঁর লেখা প্রবন্ধ দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকে । এছাড়াও তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক-এ লাইভ প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন । তিনি প্রমাণ করেছেন ফিজিওথেরাপি "এ মেডিসিন টুডে অ্যান্ড টুমরো"। স্পাইন চিকিৎসায় কীভাবে অপারেশন ছাড়াই স্পাইনের রোগ চিকিৎসা করা যায়-- এ বিষয়ে তিনি অপরিসীম সাফল্য অর্জন করেছেন । যেমন-- একটি সঠিক এক্সারসাইজ তাৎক্ষণিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে । সে জন্য তিনি বলেন-- "সঠিক এক্সারসাইজ 'ইজ এ পেইনকিলার'।" মাথা ব্যথা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জনক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত । এই অনন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ২০০২ সালে বাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ কর্ত্তৃক 'বিশেষ পদক' এবং ২০১০ সালে 'অতীশ দীপঙ্কর গোল্ডমেডেল' প্রদান করে ।