রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় 4.52

3.8 star(s) from 10 votes
Shahzadpur
Sirajganj, 6700
Bangladesh
Add Review

About রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় is one of the popular place listed under University in Sirajganj , College & University in Sirajganj ,

Contact Details & Working Hours

Details

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে, এটি সমগ্র দেশবাসীর জন্য এক আনন্দের সংবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে, তাঁর একান্ত চেষ্টা ও প্রেরণাতেই আজ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন গ্রোথিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। সে সময় প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের নেতৃত্বে বেসরকারি উদ্যোগে 'টেগোর পিস ইউনিভার্সিটি' (রবীন্দ্র শান্তি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ উদ্যোগ জোড়ালো হতে থাকে। এ সময় দেশি-বিদেশি প্রায় তিনশত এনজিওকে টেগোর পিস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সম্পর্কিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরাধীন তৎকালীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর এ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ড. মহিউদ্দিন আলমগীর। আর এর তিনজন সার্বক্ষণিক কর্মির একজন ছিলাম আমি। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের একজন এমফিল গবেষক। ১৯৯৭ সালেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু যে কোনো কারণে হোক তা আর সম্ভব হয় নি। ২০০৩ সালে ড. মযহারুল ইসলামের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ স্থিমিত হয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন আবার জাগ্রত হয়। ২০০৯ সালে শাজাদপুরে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে শাহজাদপুরবাসীর পক্ষ থেকে সরকারি উদ্যোগে এখানে রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী ওঠে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শাহজাদপুরের কৃতি সন্তান প্রফেসর ড. আবদুল খালেক। শাহজাদপুরের তৎকালীন সাংসদ চয়ন ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাসিবুর রহমান স্বপনের নেতৃত্বে শাহজাদপুরে রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়। এ আন্দোলনে সমগ্র শাহজাদপুরবাসী যেন জেগে ওঠে। শাহজাদপুরে রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীর পাশাপাশি রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য শিলাইদহ ও পতিসরেও একই দাবী উঠতে থাকে। এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে শুরু হয় রশি টানাটানি। ফলশ্রুতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্র
জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এবং জাতীয় সংসদেও একাধিকবার 'শাহজাদপুর, শিলাইদহ ও পতিসর এই তিন জায়গাতেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি এও বলেন যে, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হবে শাহজাদপুরে- এ কারণে যে, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। শাহজাদপুরের অবস্থান যেহেতু এ দু জেলার কাছাকাছি, তাই শাহজাদপুরেই মূল ক্যাম্পাস হবে।তাছাড়া শাহজাদপুরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও সর্বোত্তম'। আমরা মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর এ নিয়ে রশি টানাটানির অবসান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ছোট্ট একটি কথা আছে। কথাটি এ রকম- রবীন্দ্রানুরাগীদের কাছে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য প্রতিসর শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের গুরুত্ব একই রকম । একটি থেকে আরেকটির গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। কাজেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম (একাডেমিক ও প্রশাসনিক) যেন একমাত্র মূল ক্যাম্পাস ভিত্তিক না হয়ে পড়ে সে দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই শাখা ক্যাম্পাসকে যদি মূল ক্যাম্পাসের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিন্যাস করা হয়-তাহলে বর্তমানে রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে যে রশি টানাটানি চলছে তার সমাধান অনেকটাই সম্ভব। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার জন্য ইতোমধ্যে ইউজিসি'র একটি প্রতিনিধি দল ভারতের বিশ্বভারতী (শান্তিনিকেতন) ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে এসে তাদের মতামত দিয়েছেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের খসড়াও প্রস্তুত। এখন শুধুমাত্র জাতীয় সংসদে আইনটি পাশ প্রয়োজন। দ্রুত এই কাজটি করে এ বছরই (২০১৪-১৫) রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব ।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু শান্তিনিকেতনের আদলেই গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে সেহেতু, শান্তি নিকেতনের মতোই একটি সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা সূচিত হবে বলে আমরা মনে করি। তবে শান্তি নিকেতনের আদলে গড়ে উঠলেও শান্তিনিকেতনের মতো এর যেহেতু একটি মাত্র ক্যাম্পাস নয় সেহেতু এখানে একটু সমস্যা আছে বলে মনে হয়। আমরা ধরেই নিতে পারি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তিনটি। শাহজাদপুর, পতিসর ও শিলাইদহ-এই তিন ক্যাম্পাসের কোথায় কী অনুষদ বা বিভাগ থাকবে, প্রশাসনিক ইউনিটগুলো কোথায় কিভাবে হবে ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শাজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হলে তা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু এখানে আমি পতিসর ও শিলাইদহ ক্যাম্পাস নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। ১৯২১ সালে ঠাকুর পরিবারের জমিদারি শেষবারের মতো ভাগ বাটোয়ারা হলে পতিসরই রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব জমিদারিতে পরিণত হয়। ফলে রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৭ সালে এখানে তার বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে একটি স্কুল করেন। এছাড়াও এখানে পরবর্তীকালে প্রতিষ্টিত হয়েছে বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের নামে একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কৃষিপ্রযুক্তি ইন্সটিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হলেও, এ প্রতিষ্ঠান থেকেই আত্রাই-রাণীনগরের বর্তমান সাংসদ জনাব ইসরাফিল আলম এমপি'র সম্পাদনায় এবং তাঁর অক্লান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রমে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিতভাবে রবীন্দ্রনাথের নামে প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের একটি গবেষণা জার্নাল। যার নাম 'রবীন্দ্র জার্নাল'। এ জার্নাল ইতোমধ্যেই দেশে ও বিদেশে প্রভূত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। পতিসর কাছারিবাড়ির পাশেই আন্তর্জাতিক মানের একটি রেষ্টহাউজ স্থাপিত হয়েছে। সমপ্রতি রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউট (স্কুলে) একটি রবীন্দ্র মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের পল্লীউন্নয়ন ও শিক্ষাভাবনাটি গড়ে ওঠেছিল প্রতিসরকে কেন্দ্র করেই। কাজেই রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতেই পতিসর ক্যাম্পাসের যাত্রা সূচিত হওয়া একান্তভাবেই কাম্য। যা হতে পারে এখানকার দুটি প্রতিষ্ঠান-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃষি প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট এবং রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউশনকে আত্তীকৃত করে। অথবা এখানে কয়েকটি অনুষদ বা বিভাগও খোলা যেতে পারে। বিশেষ করে কৃষি অনুষদটি এখানেই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কেননা, রবীন্দ্রনাথ এখান থেকেই বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সেই স্বপ্নটি এখানেই বাস্তবায়িত করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি। রবীন্দ্র জার্নাল প্রকাশের মাধ্যমে এখানে ইতোমধ্যেই একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে। সুতরাং এখানে রবীন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র বা রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র নামে একটি ইনস্টিটিউটও হতে পারে । কেননা এখানে পথটা তৈরি হয়ে আছে।
বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে যেমন মনে করা হয় তেমনি, রবীন্দ্রনাথের সাংস্কৃতিক মননটি এ অঞ্চল দ্বারাই সমৃদ্ধ হয়েছে। সুতরাং এ ভূপ্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিবেশের প্রতি লক্ষ রেখে শিলাইদহ ক্যাম্পাসে একটি রবীন্দ্র সাংস্কৃতিক পল্লী গড়ে উঠতে পারে। যেখানে থাকতে পারে চারু - কারু ও সঙ্গীত ইনস্টিটিউট। এছাড়াও কয়েকটি বিভাগ বা ফ্যাকাল্টিও খোলা যেতে পারে। রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা অঞ্চলকে বাদ দিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হোক এটি কারোরই কাম্য নয়। সবাইকে সঙ্গে করেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা হোক।
১৯৯৬-১৯৯৭ সালে যখন এই বিশ্ববিদ্যলয়ের বীজ রোপিত হয়েছিল তখন এর স্বপ্নটি ছিল এ রকম-দেশের আর দশটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় হবে আলাদা। দেশ বিদেশের হাজারো শিক্ষার্থীর পদভারে এর ছায়া সুশীতল ক্যাম্পাস থাকবে বাংলাদেশের হাজারো প্রজাতির পাখির কলতানের মতোই মুখর। এখানকার শিক্ষার্থীরা হবে জাতীয় মননের প্রতীক। কোনো রাজনৈতিক ক্রিয়াকা এর পরিবেশকে কলুসিত করবে না। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই হবে বিশ্বনাগরিক। রবীন্দ্রনাথই হবেন তাদের পাথেয় । এ স্বপ্নের দু্রত বাস্তবায়ন হোক এই শুধু প্রত্যশা।

Map of রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

Updates from রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

Reviews of রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

   Loading comments-box...