কলেজ পাড়া - college para 4.33

4.8 star(s) from 6 votes
Barisal, 8200
Bangladesh
Add Review

About কলেজ পাড়া - college para

কলেজ পাড়া - college para কলেজ পাড়া - college para is one of the popular place listed under Community & Government in Barisal , Region in Barisal , Real Estate in Barisal ,

Contact Details & Working Hours

Details

বরিশালে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত বিএম কলেজ শাশ্বতকালের কৃতিত্বের এক মূর্ত প্রতীক। এ অঞ্চলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার পথিকৃৎ এ কলেজটি ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পাঁচ কলেজের একটি। পূর্ববাংলা তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রথম দিকের সরকারি কলেজগুলোরও একটি এটি। এ কলেজকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিএম কলেজের ইতিহাস মানে আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাস। বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাস ও বিকাশের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, আমেরিকার হারবার্ড, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া ও ভারতের নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় যেরূপ অবদান রেখেছে, পূর্ব বাংলায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে বিএম কলেজের ভূমিকা অনুরূপ বললেও বেশি বলা হবে না। উনিশ ও বিশ শতকের গোড়ার দিকে অবিভক্ত বাংলার জনজীবন যারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন এ কলেজের ছাত্র। দেশের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনে বিএম কলেজের ছাত্ররা এককভাবে যত বড় অবদান রেখেছে এদেশের আর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পারেনি।

আমরা নিশ্চয়ই জানি, ঢাকা ও কলকাতা থেকে দূরে অবস্থান এবং নদী-নালা দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পশ্চাৎপদ ছিল। ১৮৫৪ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চল আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নবজাগরণ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিন দশক পরে আধুনিক বরিশালের স্থপতি দরিদ্রবান্ধব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৪ সালে বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে প্রতিষ্ঠা করেন বিএম স্কুল। তখনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আর সুযোগ ছিলো না বরিশালে। তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুরোধে এই দক্ষিণ বাংলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে ১৮৮৯ সালে (১৪ জুন) সত্য প্রেম পবিত্রতার মহান আদর্শে ওই স্কুল কম্পাউন্ডেই বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাত্মা অশ্বিনী । ১৯১৭ সালে বিএম স্কুল কম্পাউন্ড থেকে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয় বিএম কলেজ। এরই প্রেক্ষিতে প্রায় ৬২.০২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই নিজস্ব ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র গড়ে কলেজ পাড়া। সে হিসাবে এই পাড়ার বয়স এখন প্রায় ৯৭ বছর। এর আগেও এই এলাকায় জনবসতি ছিলো। কিন্তু এটি কলেজ পাড়া হিসাবে পরিচিত ছিলো না। অর্থাৎ মাত্র তিন বছর পর ২০১৭ সালে কলেজ পাড়ার শতবর্ষপূর্তী।

কলেজ পাড়া মূলত বরিশালের বৃহৎ পাড়াগুলোর একটি। এর পশ্চিমে নথুল্লাবাদ, পূর্বে নতুনবাজার, উত্তরে জেল খাল ও দক্ষিণে গোরস্থান রোড। এর মধ্যে আবার ছোট ছোট পাড়া বা গলি-মহল্লাও আছে অনেকগুলো। আবার একটু পিছনে ফিরি, এই এলাকার নিজস্ব ক্যাম্পাসে আসার পরই শুরু হয়েছিলো বিএম কলেজের নতুন অধ্যায়। সে সময় স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের কারণে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি, উচ্চ শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামী থেকে চলে এসে দেশসেবা ও মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করাকে অধিক পছন্দনীয় মনে করলেন। অশ্বিনী কুমার দত্ত তখন ভারত বর্ষের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষকের সমাবেশ ঘটিয়ে এ কলেজের শিক্ষার মান অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান। তার সাথে সাথে তিনি নিজেও লাভজনক ওকালতি পেশা ছেড়ে বিনা বেতনে এ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, বাবু সতীশচন্দ্রসহ সে সময় বিএম কলেজের অধ্যক্ষদের পাণ্ডিত্ব্য এবং পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য বরিশালের জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে আনে। এ কলেজের অধ্যাপকদের প্রজ্ঞা ও শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

বিএম কলেজে ১৯২২ সনে ইংরেজি ও দর্শন, ১৯২৫ সনে সংস্কৃতি ও গণিত, ১৯২৮ সনে রসায়ন এবং ১৯২৯ সালে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল বিএম কলেজের স্বর্ণযুগ। তখন এ কলেজের শিক্ষার মান এতই উন্নত ছিল যে, অনেকে প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলার ছোটলাট স্যার উডবর্ন সরকারি শিক্ষা বিবরনীতে লিখেছিলেন This moffusil College promises some days to Challenge the supremacy of the Metropolitan (Presidency) College. একই সময়ে বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল লিখেছিলেন Barisal may be said to be the Oxford of East Bengal. ১৯৬৫ সালের পহেলা জুলাই বিএম কলেজকে প্রাদেশীকরণ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনের পরে আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। সর্বশেষ ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে চালু হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও মার্কেটিং বিভাগ। এ কলেজে বর্তমানে মোট ২৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বিলুপ্ত করা হয়।

এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে যে এলাকাটি গড়ে উঠেছে- সেখানকার অধিকাংশ স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা কেমন হতে পারে, তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বিপ্লবী চিত্তরঞ্জন, স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, মুকুন্দ দাস, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, ফজলুল কাদের চৌধুরী, কবি জীবনানন্দ দাস, আবুল হাসান, সিরাজ শিকদার, হুমায়ুন কবির, বিডি হাবিবুল্লাহসহ অসংখ্য গুনীজনের স্মৃতিবিজড়িত এ পাড়ার শিক্ষিত মানুষের হার বরাবরই বেশী। যে কারণে এ এলাকাটি চিন্তা- চেতনায়ও অগ্রগামী ছিলো সব সময়। বৃটিশবিরোধী স্বদেশী আন্দোলন, খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন, ’৫২- এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯ গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএম কলেজের শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই কলেজ পাড়ার সচেতন বাসিন্দারাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তখন সামাজিক কর্মকা-, খেলাধুলা ও সাংগঠনিক চর্চার জন্য খেলাঘর, ক্লাবসহ নানা প্ল্যাটফর্ম ছিলো। তখন থেকেই পুরো এই পাড়াটাই ছিলো একটি পরিবার। পাড়ার প্রতিটি সদস্যই ছিলো আপন পরিবারের সদস্যের মতো।

Map of কলেজ পাড়া - college para

Updates from কলেজ পাড়া - college para

Reviews of কলেজ পাড়া - college para

   Loading comments-box...